Go Back to All Articles শেখার বিভিন্ন পদ্ধতির সুবিধা – অসুবিধা

আমার একজন শিক্ষার্থী একটি প্রশ্ন করেছেন –

প্রশ্নঃ

আমরা যারা বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শিখার জন্য চেষ্টা করি তারা ৩ ভাবে শেখার পদ্ধতি গ্রহন করিঃ

১. ট্রেইনিং সেন্টারে Group ক্লাশের মাধ্যমে ব্যাচ ধরে ধরে

২. পার্সোনালি কোন প্রফেশনাল ব্যাক্তির নিকট গিয়ে আলাদাভাবে

৩. ওয়েবে টিউটিরিয়াল দেখে দেখে নিজে নিজে এখন প্রশ্ন হলঃ

এই তিনটির মধ্যে কোনটি বেশি effective আর কোনটি বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে এবং কেন ??

উত্তরঃ

কোন কিছু শিখা অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভরশীল। মাধ্যম ম্যাটার করে, তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখানে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর।

একজন বুদ্ধিমান শিক্ষার্থী দেখা যাবে সব মাধ্যমেই ভালো শিখতে পারছে, আবার একজন দুর্বল শিক্ষার্থী দেখা যাবে কোন মাধ্যমেই ভালো করছে না। আবার একই লেভেলের ২ জন শিক্ষার্থী হয়ত দেখা যাবে ২টি আলাদা মাধ্যমে ভালো করছে। আবার হয়ত একই লেভেলের ২ জন শিক্ষার্থী ২ জন আলাদা শিক্ষকের কাছে ভালো করছে। এমন অনেক কম্বিনেশন সম্ভব।

তবে কোন মাধ্যমের কি কি সুবিধা ও অসুবিধা সেটা নিয়ে আমরা আলাপ করতে পারি।

১) ট্রেইনিং সেন্টারে Group ক্লাশের মাধ্যমে ব্যাচ ধরে ধরে শিখতে গেলে একটি চ্যালেঞ্জ সামনে আসে, সেটা হল একটি ব্যাচে অনেক শিক্ষার্থী থাকে, সেখানে সবাইকে একই তালে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে যদি কেউ তাল মিলাতে না পারে, দেখা যায় সে পিছিয়ে পরে ও আর রিকভার করতে পারে না। একজন শিক্ষকের পক্ষে সবার সমস্যা আলাদাভাবে সমাধান করা কঠিন হয়।

সুবিধা হল, এখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একজন প্রফেশনালের সান্নিধ্যে থেকে শিখার সুযোগ আসে, প্রশ্ন করে শিক্ষকের সাহায্য নেয়া যায়। একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থীর কাজ থেকেও শিখতে পারে।

২) পার্সোনালি কোন প্রফেশনাল ব্যাক্তির নিকট গিয়ে আলাদাভাবে শিখতে পারলে নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করবে। কিন্তু এটা সাধারণত হয়ে উঠে না। কারণ একজন প্রফেশনাল অনেক ব্যস্ত থাকেন। তার পক্ষে একা একজনকে সময় দিয়ে রেগুলার শিখানো অনেক ব্যয়বহুল কাজ। তাই প্রথম দিকে সময় দিলেও শেষে তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এটাই স্বাভাবিক। আর যেহেতু তিনি রেগুলার শিখানোর জন্য কাজ করছেন না, তাই তার শিখানোর জন্য কোর্স মেটেরিয়াল, টেস্ট, ইত্যাদি তৈরির কোন প্ল্যান থাকে না। তাই তিনি অনেকটা ফরম্যাট বিহীনভাবে শিখাতে থাকবেন। যদি অনেক লম্বা সময় ধরে তার কাছ থেকে শিখার সুযোগ পাওয়া যায় অর্থাৎ সময় কোন ফ্যাক্টর না হয়, তাহলে এই ধরণের শিখা ফরম্যাট বিহীন হলেও কার্যকর হওয়ার কথা। তবে কে কতদিন স্বার্থহীনভাবে এটা করতে পারবেন, সেটাই প্রশ্ন। অনেকেই শুরু করেন আগ্রহ নিয়ে, কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর যখন বুঝতে পারেন কষ্ট হচ্ছে তখন পিছটান দেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থী মাঝপথে সাহায্যহীন হয়ে পারতে পারে।

৩) ওয়েবে টিউটিরিয়াল দেখে দেখে নিজে নিজে শিখা খুবই অসম্পূর্ণ প্রসেস। শিখার জন্য বেশ কয়টি জিনিসের প্রয়োজন। একটি হল দেখা, একটি হল যাচাই করা, একটি হল সংশোধন। ওয়েবে টিউটিরিয়াল দেখে কেবল প্রথমটি হয়।

একজন নবিস কখনো নিজের ভুল নিজে ধরতে পারে না। এমনকি একজন প্রফেশনাল যখন শিখতে আসে, দেখা যায় তার কাজের মধ্যেও ভুল থাকে। কিন্তু সেটা এত দিন সে বুঝতে পারেনি। কারণ নিজের ভুল নিজে ধরা যায় না। নিজের কাছে নিজের জ্ঞান অনুযায়ী সেটাই সঠিক মনে হয়।

শিক্ষার্থীরা যখন নিজে নিজে ভিডিও বা টিউটোরিয়াল দেখে শিখতে যান তখন তাদের যে মূল সমস্যা হয়, সেটা হল, তারা সব সময় বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। অনেক সময় প্রশ্ন করতে পারে না, কারো সাহায্য নিতে পারেন না।

তবে এর মানে এই নয় যে নিজে শিখা যায় না বা চেষ্টা করা উচিৎ নয়। নিজে শিখার চেষ্টা সব সময় করতে হবে। তবে কারো সাহায্য নিতে পারলে খুব দ্রুত শিখা যায় বা নিজের ভুল গুলো দ্রুত ধরা যায়।

কাজেই নিজে শিখতে গিয়ে অনেকে পথ হারিয়ে ফেলে বা অনেক সময় লাগিয়ে দেয় কারণ এটাই হওয়ার কথা।

যাদের অভিজ্ঞতা বেশি বা যারা নিজে কিভাবে শিখতে হয় সেই প্রসেস ভালো বুঝে তাদের জন্য কাজটি সহজ হয়। যারা একটু কম দক্ষ ও যাদের নিজে শিখার প্রসেস আয়ত্তে নেই, তারা দেখা যায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এই দুর্বলতা মূলত তৈরি হয়েছে স্কুল কলেজে মুখে তুলে খাওয়ানোর মাধ্যমে।

আর কিছু জিনিস আছে যেগুলো অভিজ্ঞতার বিষয় ও ফ্রিতে ওয়েবে আপনি পাবেন না। সেগুলো শিখা যায় না। কারণ এগুলো ফ্রিতে পাওয়া যায় না। কিন্তু অনেকেই সেটা হয়ত বুঝতে পারেন না।

মোঃ জালাল উদ্দিন, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ডেভস্কীল.কম

Share with Your Friends