Go Back to All Articles আমার জব ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতা ও কিছু সাজেশন

আজকে আমার নিজের ইন্টারভিউ দেয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কিছু লিখতে চাচ্ছি। এটা নিতান্তই আমার নিজের অভিজ্ঞতা। এটা অন্যদের সাথে নাও মিলতে পারে। কাজেই বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আর একটি কথা – শুরুর দিকে আমার তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাকে পরামর্শ দেয়ার মতও কেউ ছিল না। কাজেই একদম শুরুর দিকে আমি হয়ত কিছু কিছু কাজ করেছি যার সাথে এখন আমি একমত নই। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়। আর এজন্যই আমি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে আমার নিজের ভুল ও অন্যদের ভুলগুলো তুলে ধরে নতুনদের সচেতন করতে চেষ্টা করি। আমার পোস্টটি ভালো লাগলে আপনি শেয়ার করতে পারেন।

আমার প্রথম জব ইন্টারভিউ এর জন্য কল আসে যখন আমি শেষ সেমিস্টারে আছি তখন। আমার ইউনিভার্সিটির এক বন্ধু ইতিমধ্যে সেই কোম্পানিতে জয়েন করেছে কারণ সে সম্ভবত বেশি বেশি কোর্স শেষ করায় আমার থেকে এক সেমিস্টার আগেই কমপ্লিট করে ফেলেছিল।

তো কোম্পানিটিতে তার মাধ্যমে আমি সিভি প্রেরণ করি ও ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক আসে। বিপত্তি হল, যেদিন যে সময় ইন্টারভিউ ঠিক সেই সময় আমার একটি ফাইনাল পরীক্ষা ছিল ইউনিভার্সিটিতে। তবে জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ কল, তাই সাহস করতে পারছিলাম না বিষয়টি উল্লেখ করে অন্য টাইমে ইন্টারভিউ নিতে বলার। তাই চিন্তা করলাম কি করা যায়। পরীক্ষাটি ছিল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্সের। আমার জন্য সহজ সাবজেক্ট। কাজেই পরীক্ষার আগেই মানসিক প্রস্তুতি নিলাম যে অল্প সময়ে পরীক্ষা শেষ করে ইন্টারভিউ এর জন্য বের হয়ে যাবো। আমি ইন্টারভিউতে লেট করে যেতে রাজি ছিলাম না। কারণ কিছু দিন আগে আমি একটি আর্টিকেলে পড়েছি যে ইন্টারভিউতে একদম ১০ -১৫ মিনিট আগে অফিসে প্রবেশ করা উচিৎ। যাতে সেটা খুব বেশি আগেও না হয় আবার নির্ধারিত সময়ের পরেও না হয়। তো আমি সেই মতই প্ল্যান করলাম। বন্ধুর কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কিত কিছু টিপস নিলাম যে কি কি রিভিউ করবো। সে মূলত আমাকে ডাটাবেস নিয়ে একটু ভালোভাবে দেখে আসতে বলেছিল।

যথারীতি আমি ২ ঘণ্টার পরীক্ষা প্ল্যান মত ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করে বের হয়ে গেলাম। আমার ধারণা ছিল রাস্তায় জ্যাম থাকতে পারে, কিন্তু রাস্তা ছিল একদম ফাঁকা, তাই আমি ইন্টারভিউ এর সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই অফিসের একদম সামনে পৌঁছে গেলাম। অফিস খুঁজে পেতে একটু সমস্যা হল। কোন সাইনবোর্ড নেই, একটু গলি মত জায়গায় সাধারণ বাসা বাড়ির মত অফিস। তবে খুঁজে পাওয়ার পরও হাতে সময় থাকায়, রাস্তায় দাড়িয়ে থাকলাম, কারণ সেই মূল মন্ত্র যে বেশি আগে প্রবেশ করা ঠিক হবে না। তো ১০ মিনিট বাকি থাকতে আমি বেল বাজালাম। একজন দরজা খুলে আমাকে সোফায় বসতে বলে চলে গেলেন। আরও একজন দেখলাম বসে আছে ইন্টারভিউ এর জন্য। আর ভিতরে আরেকজনের ইন্টারভিউ চলছে।

আমি খুব নরমাল ছিলাম। কোন নার্ভাসনেস ফিল করিনি। তবে একটু অদ্ভুত লাগছিল। বসে বসে অফিস দেখতে থাকলাম। ভিতরের ক্যান্ডিডেট বের হয়ে গেল। দেখে মনে হল ইন্টারভিউ খুব খারাপ হয়েছে। মনে হল ভিতর থেকে উত্তেজিত গলায় কথাও শোনা যাচ্ছে। এরপর আমার ডাক আসলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসলাম ফর্মাল ভাবে। এরপর আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা শুরু হল।

প্রথমে জানতে চাওয়া হল আমাকে কিছু নম্বর সর্ট করে সাজাতে হলে কিভাবে কোড লিখবো। আমি প্রশ্ন করলাম আমাকে কি সর্ট করতে পারলেই হবে নাকি ইফিশিয়েন্ট ভাবে করতে হবে। বলা হল, যেকোনোভাবে করলেই হবে, তো আমি মুখস্ত বাবল সর্ট মেরে দিলাম। যেহেতু কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং করতাম, কাজেই এটা আমার জন্য কোন কঠিন প্রশ্ন ছিল না।

এরপর জিজ্ঞাসা করা হল, ডাটাবেসে প্রাইমারী কি ও ইউনিক কি এর মধ্যে পার্থক্য কি। এটা ভালো মত পড়ে এসেছি, তাই সুন্দর করে উত্তর দিলাম। টেবিল জয়েন নিয়ে প্রশ্ন করা হল ও একটি কুইরি লিখতে দেয়া হল, সহজেই করে দিলাম। এরপর মনে হয় আমাকে আর কোন প্রশ্ন করা হল না। বরং তারা বলল তারা আমাকে নিতে চায়, আর সেলারি হবে ৮,০০০ টাকা। আমি একটু চুপসে গেলাম। আমি জানি আমার বন্ধুও ৮,০০০ এ জয়েন করেছে, কিন্তু আমার নিজেকে আরও ভালো প্রোগ্রামার মনে হত তখন, কাজেই আমি ১৫,০০০ চাচ্ছিলাম। তারা আমাকে বলল যে ৮,০০০ এই জয়েন করতে হবে কারণ প্রথমে তারা কম দিয়ে শুরু করে, এরপর সেলারি বেড়ে যাবে। কিন্তু আমি কোন মতেই মানতে পারছিলাম না, আবার প্রথম চাকরি পেয়ে স্পটেই মানা করে দিয়ে আসবো সেই সাহসও হচ্ছিল না। তাই কোন রকম একটা সম্মতি দিলাম। তো তারা আমাকে পরদিন এসে এপন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যেতে বলল। আমি চলে আসলাম।

কিন্তু বাসায় এসে আমি আমার পরিচিত একজন সিনিয়র ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি আমাকে বলছিলেন যে তার কোম্পানিতে আমি যেন জয়েন করি। তো আমি সেই অপেক্ষায় অনেকদিন বসে ছিলাম। কিন্তু ইন্টারভিউ কল পাচ্ছিলাম না। তাদের লোক নিয়োগ নিয়ে দেরি হচ্ছিল। এখন আমি একদিকে জব পাচ্ছি অন্য দিকে ঐ কোম্পানিতে যেতে চাই, তাই কি করবো এই বিষয়ে পরামর্শ চাইলাম। তিনি আমাকে বললেন যে দেখ এত কম টাকায় জয়েন করা ঠিক হবে না, আর কিছু দিন অপেক্ষা কর, তাহলে আমার কোম্পানিতে জয়েন করতে পারবে।

আমি সেই কথা মত জয়েন না করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ৮,০০০ টাকা আমার খুব কম মনে হচ্ছিল। তবে তখন ১৫,০০০ ফ্রেশারের স্ট্যান্ডার্ড সেলারি ছিল। তো পরদিন আমি আমার বন্ধুকে ফোন দিয়ে বললাম যে আমি জয়েন করতে চাই না, এখন আমি এটাও চাই না যে তার কোন সমস্যা হোক, যেহেতু সে রেফার করেছে। বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে অফিসে ফোন দিলাম ও তাদের জানালাম যে কিছু পার্সোনাল কারণে আমি জয়েন করতে পারছি না।

এরপর অনেক দিন চলে গেল ইন্টারভিউ এর জন্য সিনিয়র ভাই আর ডাকেন না। আমিও বার বার বিরক্ত করি না। কিন্তু পাশ করার পর বসে থাকা এক বিপদ। পরিবার মনে করছে আমার যোগ্যতা নেই তাই আমি চাকরি পাচ্ছি না। কাজেই তারা আমাকে নিয়ে তদবির করা শুরু করলো পরিচিত বিভিন্ন আত্মীয়দের কোম্পানিতে। আমাকে একটি হসপিটালের রিসিপশনিস্ট বানানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হল। কারণ রিসিপশনিস্টকে একটি ডেস্ক কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতে হয়, কিছু টাইপ করা লাগে। আমি তো পুরা বিরক্ত। কিন্তু পরিবারের লোকজন তো আর জানে না প্রোগ্রামার মানে কি, বা আমার আসলে কোন ধরণের চাকরি করা উচিৎ।

কিন্তু কোম্পানির মালিক আমার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন যে আমি এই কাজের লোক নই। কাজেই তিনি আমাকে বললেন যে তুমি কোন সফটওয়্যার কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করো, আমি রেফার করে দিব আমার পরিচিত কিছু কোম্পানিতে। তো সেখান থেকে ফিরে এসে আবার অনেক দিন বসা। খুব বিরক্ত লাগছিল যে এতো এতো প্রোগ্রামিং করলাম ইউনিভার্সিটিতে অথচ কেউ ডাকে না কেন।

আমার অন্য বন্ধুরা বিভিন্ন কোম্পানিতে জয়েন করছে। তাদের একজনকে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম যে আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা দেখ। আর মনে মনে আগের চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য নিজেকে দোষারোপ করতে থাকলাম। তো সেই বন্ধু বলল যে আমি ভালো প্রোগ্রামার এটা অনেকেই জানে কিন্তু সবাই ধরে নিয়েছে যে আমি দেশের বাইরে চলে যাবো তাই কেউ আমাকে নিয়ে আগ্রহী নয়। আমি তো আকাশ থেকে পরলাম। পরে বুঝতে পারলাম যে আমার কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এর ২ টিম মেট দেশের বাইরে চলে যাবে বলে সবাই জানে। আমরা সব সময় এক সাথেই চলাফেরা করি, কাজেই সবাই ধরে নিয়েছে যে আমিও ঐ পথেই যাবো। তো আমি শেষ পর্যন্ত ঐ বন্ধুর রেফারেন্সে তাদের কোম্পানিতে ইন্টারভিউ এর জন্য ফোন পেলাম।

সময় মত ইন্টারভিউতে গেলাম ও প্রশ্ন শুরু হল। গত বার একজন ইন্টারভিউ নিয়েছিল। এবার ৩ জন মিলে ঘিরে ধরল। তবে একজন আমার সিনিয়র পরিচিত ভাই, বাকি ২ জন কোম্পানি মালিক ও তার বন্ধু।

মালিকের বন্ধুই মূলত প্রশ্ন করলেন। আমাকে একটি কোড লিখতে দিলেন যেখানে একটি ট্রি এর বিভিন্ন নোড আমাকে ভিসিট করতে হবে। আবারো, যেহেতু কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং করেছি অনেক, এটা আমরা জন্য সহজ মুখস্ত কোড। এরপর আমাকে একটি কোড করতে বলা হল যেখানে ২৪ ঘণ্টা ফর্মেট থেকে ১২ ঘণ্টা ফরম্যাটে আমাকে সময় পরিবর্তন করতে হবে। করে দিলাম। প্রথম চেষ্টায় অবশ্য একটা এজ কেস মিস হয়ে গিয়েছিল, সেটা মালিকের বন্ধু ধরলেন, এরপর আমি আবার ঠিক করে দিলাম কোড।

এরপর আর কোন প্রশ্ন না করে তারা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলাপ করা শুরু করলেন যে আমি কি কি প্রত্যাশা করি কোম্পানির কাছে। আমি দেশের বাইরে যেতে চাই কিনা। যেহেতু এই কারণে আমাকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়নি, আমি খুব ভালো মত তাদের নিশ্চিত করলাম যে আমার বাইরে যাওয়ার কোনই ইচ্ছা নেই। এরপর আমাকে ১৫,০০০ টাকা সেলারি অফার করা হল। কিন্তু এখন আমি আবার ১৮,০০০ এর জন্য আবদার করলাম। তারা রাজি হল না এই বলে যে এটা দিলে কোম্পানিতে অন্য যারা জয়েন করেছে ১৫,০০০ তে তাদেরও সেলারি বাড়াতে হবে। আমি আবারও গো ধরে রাজি না হয়ে চলে আসলাম।

এরপর আরও কিছু দিন বসা। কোম্পানি থেকে যোগাযোগ করে না। আমার ডিমান্ড তারা মেনে নিচ্ছে না। তো আমার বন্ধু আমাকে বুঝাল যে এই অল্প কারণে জব না ছেড়ে বরং জয়েন করলে কিছু দিন পর বেড়ে যাবে। তো সেই শর্তে আমি রাজি হলাম। জয়েন করার ২ সপ্তাহ পর ঐ হসপিটাল মালিক আমাকে যেখানে রেফার করেছিলেন তাদের কোম্পানি থেকে আমাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ফোন করা হল। আমি জানি এই কোম্পানিটি অনেক বড় কোম্পানি, আমি যেখানে জয়েন করেছি সেটা অনেক ছোট ছিল। তাও আমি মানা করে দিলাম যে আমি এক জায়গায় জয়েন করে ফেলেছি। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটিকে এটা শুনে অনেক হতাশ মনে হল। মনে হয় সে আমার সিভি পছন্দ করেছিল। যাই হোক আমি নীতিকে প্রাধান্য দিলাম।

৯ মাস জব করার পর সেই সিনিয়র ভাই ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকলেন। মূলত এখনকার কোম্পানিতে প্রায় সবই শিখে ফেলেছি আর সেলারি আরও দ্রুত বাড়া দরকার এই ২ কারণে আমি সেখানে ইন্টারভিউ দিলাম ও জয়েন করে ফেললাম। প্রথমে আমাকে একটি লিখিত পরীক্ষা দিতে বলা হল। প্রশ্ন গুলো কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ছিল। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না আর কিছু কিছু নিয়ে কনফিউজড ছিলাম তবে বেশিরভাগ উত্তর দিতে পারলাম।

এরপর আমাকে ছোট একটি ভাইভা দিতে হল, সেখানে প্রশ্ন খুব কঠিন ছিল না তবে ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক এর বেসিক নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল। টিম লিড আমাকে গ্রিন সিগনাল দিয়ে দিলেন। আমাকে এপয়ন্টমেন্ট লেটার দেয়া হল, সেলারি ২৫,০০০ টাকা। আগের কোম্পানিতে ছিল ১৮,০০০।

এরপরের জবে জয়েন করার কারণ ছিল ২ বছর ধরে সেলারি না বাড়া। তখন ২০০৮ -২০০৯ সনের অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে কিনা এটা নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত ছিলাম। কোন কিছুই মনে হচ্ছিল ঠিক চলছে না। কাজ নিয়েও কিছু বিরক্ত ছিলাম। তাই বিডি জবসে একটি ভালো কোম্পানির জব পোস্ট দেখে সিভি ড্রপ করলাম। ড্রপ করার সময় অনলাইনে একটি ছোট টেস্ট দিতে হল। সেটার সব আমি জানতাম কাজেই কোন প্রবলেম হল না। কিছুদিন পর ইন্টারভিউ এর ডাক পেয়ে খুশি হলাম।

ইন্টারভিউতে আমি সব সময় সেই নিয়ম মত সময় মত পৌঁছে যাই। সেইদিন ছিল বন্ধের দিন। তো আমি গেলে আমাকে একটি কম্পিউটারে বসিয়ে দিয়ে নোট প্যাডে একটি পশ্ন ধরিয়ে দেয়া হয়। সেটাতে প্রায় ১২-১৫ টি প্রশ্ন ছিল।

একটি প্রশ্ন ছিল ডাটাবেস টেবিল থেকে কুইরি করে ডাটা এনে ডট নেটে এক্স এম এলের মাধ্যমে সেটা দেখাতে হবে। এর বাইরে প্রশ্ন ছিল, ইউনিট টেস্টিং, কোড কোয়ালিটি ইত্যাদি নিয়ে। সব প্রশ্ন আমার জানা ছিল। আমি খুব সুন্দর করে সব গুলোর উত্তর দিলাম। আমাকে যে সময় দেয়া হয়েছিল, তার থেকে অনেক আগেই আমি সব শেষ করে দিলাম। আমাকে বলা হল পরে রেজাল্ট জানানো হবে। তবে বলা হল, সাধারণত এই পরীক্ষার পর বিদেশের টিমের সাথে একটি ফোন ইন্টারভিউ হয়।

১ সপ্তাহ পরে আমাকে আবার অফিসে যেতে বলা হল। আমি গেলে জানানো হল যে আমার ইন্টারভিউ এর উত্তর দেখে বিদেশী টিম আমাকে নিয়ে নিতে বলেছে, আর কোন ইন্টারভিউ লাগবে না। কাজেই তারা আমাকে এপন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দিল। আমার আশা ছিল ৪৫,০০০ টাকা সেলারি কারণ তখন আমার আগের কোম্পানিতে ৩৫,০০০ সেলারি ছিল। কিন্তু বলা হল যে ৬ মাস পর ৪৫,০০০ করে দেয়া হবে এখন ৪০,০০০ জয়েন করতে হবে। তখন মাত্র বিয়ে করেছি টাকা খুব দরকার ছিল। আর আগের কোম্পানিতে সেলারি না বাড়লে চলে যাবো এটা বলে বসকে ২ বার ইমেইল করার পরও কোন একশন না নেয়াতে আমি এপয়ন্টমেন্ট লেটার নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আমার বর্তমান কোম্পানি খুব চাপাচাপি শুরু করলো যে আমি যেন না যাই, আমার সেলারি বাড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু আমি বললাম যে আমি একবার কথা দিয়ে ফেললে আর সেটা পরিবর্তন করবো না। আপনাদের কোম্পানিতে যখন কনফার্ম করেছিলেন তখন আগের কোম্পানি এমন বলেছিল, কিন্তু তখন তাদের ছেড়ে চলে এসেছি কারণ আপনাদের কথা দিয়েছি।

নতুন কোম্পানিতে যে আশা নিয়ে জয়েন করলাম তা সম্পূর্ণ পূরণ হল না। আমার তেমন ভালো লাগছিল না নতুন কোম্পানির কালচার। একটু বেশি কড়াকড়ি ছিল যার সাথে আগের কোম্পানিতে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। তো কিছু ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হল। আমিও তাদের সাথে মানাতে পারলাম না, তারাও আমার সাথে মানাতে পারল না।

এরপর যে কোম্পানিতে জয়েন করলাম সেটা ছিল আমার সেই সিনিয়র ভাইয়ের রেফারেন্সে। তিনি আমাকে মালিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেটা একদম নতুন একটি ছোট কোম্পানি তবে সেলারি আমাকে ৬০,০০০ টাকা দেয়া হল। তাই আমি জয়েন করলাম। আমাকে কোন ইন্টারভিউ দিতে হয়নি। তবে আমাকে শেয়ার পয়েন্ট ও মাইক্রোসফট ডায়নামিক্স নিয়ে কাজ করতে বলা হল যেটা খুব কঠিন ছিল তখন। কিছুদিন কাজ করার পর সেখানেও আমার ভালো লাগছিল না। সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর কাজের অরাজগতা নিয়ে আমি খুব সোচ্চার ছিলাম। কারণ তখন আমি কেবল কর্মীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সব দেখতাম। তবে অরাজগতা যে অনেক ছিল সেটাও ঠিক। এগুলো আসলে কোন দরকার ছিল না। তাই ঠিক করলাম নিজেই বিজনেস করবো। তো তখন পারিবারিকভাবে কিছু সাপোর্ট পেয়ে গেলাম ও কোম্পানি শুরু করে দিলাম ছোট করে।

এই বিজনেস অবস্থায় অনেক বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে হয়েছে। সেখানে মাঝে মাঝে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। বেশিরভাগ ইন্টারভিউগুলো আসলে নরমাল আলাপ আলোচনা ছিল। তবে কিছু ইন্টারভিউ ছিল খুব ফর্মাল। এমন একটি ইন্টারভিউতে আমাকে প্রথমে কিছু অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমি ইতিমধ্যেই ক্লাউড নিয়ে কাজ করা শুরু করে দেয়াতে সেখানে খুব সুবিধা পেলাম কারণ তখন সেই কোম্পানিটি এতো বড় ছিল না আর তাদের লোকবলের মধ্যে ক্লাউড নিয়ে কাজ জানা লোক খুব কম ছিল। তো যাই হোক, প্রাথমিক অব্জেক্টীভ টেস্ট ভালো ভাবে পাস করে গেলাম। এরপর আমাকে একটি ছোট প্রোজেক্ট করতে দেয়া হল। ৩ দিনের ভিতরেই করতে হবে আর খুব ভালো মানের কোডিং করতে হবে। এমন কিছু কাজ ছিল যেটা আমি আগে করিনি। বিশেষ করে একটি ওপেন সোর্স ডাইরেক্টরি সার্ভিস দিয়ে ইউজার ভ্যালিডেশন কাজ করাতে একটু ঘাম ছুটেছিল। সময় কম থাকায় আরও কঠিন হয়েছিল কাজটি। যাই হোক, সাবমিট করার কিছুদিন পর ইমেইল পেলাম যে আমাকে পরবর্তী রাউন্ডের জন্য ভাইভা ইন্টারভিউ দিতে হবে। সেখানে আমাকে ভারতীয় একজন অনেক প্রশ্ন করলো। আমি সব প্রশ্নের উত্তর খুব ভালোভাবে দিচ্ছিলাম। কিন্তু সে খালি প্যাঁচ দিয়ে দিয়ে প্রশ্ন বাড়াচ্ছিল। দেড় ঘণ্টা ধরে সে আমাকে এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার, ডিজাইন প্যাটার্ন, কোডিং কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করলো। এরপর আমাকে একটি কোড করতে দিল যে একটি লিংক থেকে সব HTML কোডের মাধ্যমে এনে থ্রেড দিয়ে ফাইলে সেভ করতে হবে। করে দিলাম কোড।

ইন্টারভিউ শেষে আমার মনে হল এই ভারতীয় আমাকে ইচ্ছা করে ফেল করিয়ে দিবে। কারণ তার ব্যাবহার একটুও অমায়িক ছিল না আর সে খালি আমাকে ফাদে ফেলতে চাচ্ছিল। আমি ধরেই নিলাম এবার আমার হচ্ছে না। তবে যাই হোক, ৩ দিন পর ইমেইল পেলাম যে আমি পাস। খুশি আর তখন দেখে কে। কারণ সেলারি ছিল ৪ লক্ষ টাকা। এটা আমার প্রত্যাশা ছিল না। মনে মনে অনুতপ্তও হলাম সেই ভারতীয়কে সন্দেহ করার জন্য । অবশ্য তাদের ইন্টারভিউ প্রসেস রেকর্ড করা থাকে। যারা ইন্টারভিউ নেয় তাদেরও বস আছে। কাজেই কেউ ইচ্ছা করে ফেল করিয়ে দিবে এটা এতো সহজ নয়।

এর বাইরে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে ডিজাইন প্যাটার্ন নিয়ে, আর্কিটেকচার নিয়ে বিচ্ছিনভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন ফেস করতে হয়েছে। জেনারেল নলেজ আমার অনেক কাজে দিয়েছে। আমি ইন্টারভিউারের সাথে খুব স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কথা বলতে পারি। কারণ ভয় আমার মধ্যে কাজ করে না, আর আমি বেসিক কোডিং, এলগোরিদম, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং, আর্কিটেকচার নিয়ে ভালো দখল রাখায় দেখা যায় যে ইন্টারভিউতে খুব সহজেই পার পেয়ে যাই।

উপরের অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হতে পারেঃ

  1. সময় মত ইন্টারভিউতে উপস্থিত হওয়া আমার অভ্যাস।
  2. কোথাও জবের এপয়ন্টমেন্ট লেটার এনে জয়েন করলে আমি কথার পরিবর্তন করি না, অর্থাৎ প্রফেশনালিজম বজায় রাখি। এমনকি আমি জব পাওয়ার আগেই বসকে ইমেইল করেছি যে সেলারি না বাড়লে আমি চলে যাবো। এর কারণ কোম্পানিতে আমি নিজের স্কীল ও অবদান নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলাম যে কোম্পানি আমাকে এমনি এমনি বাদ দিয়ে দিবে না।
  3. নিজের স্কীল আমি সময়ের সাথে বাড়িয়ে আরও বড় ও ভালো কাজের জন্য ইন্টারভিউ ফেস করেছি। কাজেই আমি সেখানে কাজ করার জন্য আগেই নিজেকে প্রস্তুত করেছি।
  4. ইন্টারভিউতে ঠাণ্ডা মাথা থাকা আমার অনেক কাজে লাগে।
  5. আমি বেসিক জিনিসগুলো খুব ভালো করে জানি। কাজেই কোন কোড করতে দিলে হযবরল করে ফেলি না।

আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাজে লাগবে ও আপনারা অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন।

মোঃ জালাল উদ্দিন

প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ডেভস্কীল.কম

Share with Your Friends