Go Back to All Articles আমি কিভাবে শিখবো, শিখতে হলে আমাকে কি করতে হবে?

বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন আমি পাই। এর মধ্যে একটি কমন প্রশ্ন হল – “আমি কিভাবে শিখবো, শিখতে হলে আমাকে কি করতে হবে”।

প্রশ্নটি মূলত যারা নিজে নিজে প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান তাদের। এটা বেসিক প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডিজাইন, ক্লাউড কম্পিউটিং সব বিষয়েই আমাকে শুনতে হয়।

প্রশ্নটি শুনার পর এর উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে যায়। আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করি। তারপর একটা দায়সারা উত্তর দিয়ে দিতে হয়। কারণ কম কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। যেহেতু আমি এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে কিভাবে শিখতে হয়, তাই বিষয়টি আমার কাছে সহজ। কিন্তু যারা সেটা বুঝতে পারছে না, তাদের জন্য আমার উত্তরটি সহজ নয়।

যারা নিজে নিজে শিখতে চান, তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে তারা বই পড়ে বা ভিডিও কোর্স দেখে নিজে নিজে কোন কিছু শিখতে চান, কিন্তু তারা এই পদ্ধতির যে কঠিন দিকটি আছে সেটার বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন না। তাই তাদের সরল প্রশ্ন যে আমি শিখতে পারছি না কেন, আমাকে শিখতে হলে কি করতে হবে, কোন বই পড়তে হবে বা কোন ভিডিও দেখতে হবে বা কিভাবে প্র্যাকটিস করতে হবে। তারা মনে করেন যে তাদের সমস্যা মনে হয় সঠিক বই, ভিডিও, বা প্র্যাকটিস করার পদ্ধতি বাছাই করতে না পারা। আসলে বিষয়টি সেটা নয়।

মূল কথা হচ্ছে নিজে নিজে শিখার জন্য প্রথমত আপনাকে অনেক লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প করে সামনে আগাতে হবে। আর এই আগানোর পথ প্রথম দিকে অনেকটা বানরের তেল মাখানো বাশে চড়ার মত। এক হাত উঠে দুই হাত নামতে হয়। এর কারণ, একজন যে কোন কিছু নতুন শিখছে তার কাছে নতুন তথ্য প্রথমে সঠিক ধারণা তৈরি করতে পারে না। বার বার ভুল পথে চেষ্টা করে করে যখন নিজের ভুলগুলো সে বুঝতে পারে তখন সে সঠিক পথ খুঁজে পায়।

আমি যে নিজে অনেক কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করে শিখি এর জন্য আমাকে এই চরম কঠিন পথ পারি দিতে হয়। এমনও হয়েছে যেটা আসলে ১ ঘণ্টায় শিখা যেত, সেটা আমি ১ বছরে শিখেছি। এমন অনেক রাত গেছে যখন ২ টা – ৩ টা পর্যন্ত পায়চারী করেছি একটি সামান্য বিষয়ের অর্থ উপলব্ধি করতে। অনেক সেটিংস ১০০-২০০ বার চেষ্টা করার পর কাজ করেছে। এমনও হয়েছে ৬ মাস চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দিয়েছি, তারপর ২ বছর পর আবার যখন চেষ্টা করেছি তখন কাজ করাতে পেরেছি।

সব বই, ভিডিও ও ট্রেনিং থেকেই কিছু না কিছু শিখা যায়। সব বই, ভিডিও ও ট্রেনিং এই চেষ্টা করা হয় যে শিক্ষার্থী যেন যথেষ্ট শিখতে পারে। কিন্তু এখানে আপনার নিজের নেয়ার সামর্থ্য আপনার শিখার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। বই ও ভিডিওর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যায়, কারণ আপনার ভুল ধরার ও শুধরে দেবার কেউ নেই। লেখক যা লিখেছেন সেখান থেকে আপনি আসলে সঠিক ধারণা পেয়ছেন কিনা সেটা যাচাই করার জন্য কেউ নেই। আপনি নিজে তো আর নিজের ভুল সহজে ধরতে পারবেন না কারণ আপনার কাছে তো আপনার ভুলটি তখন সঠিক মনে হয়। আপনি অনেক সময় পর হয়ত নিজের ভুল বুঝতে পারেন যখন বার বার চিন্তা করার পর আপনার মাথায় অন্য রকম চিন্তা আসে।

ট্রেনিং এ শিক্ষক যদি ভালো হন, তাহলে তিনি আপনার ধারণা পরিষ্কার করার জন্য বার বার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে ভুল ধরা সহজ হয় বলে আপনি অনেক দ্রুত শিখতে পারেন।

তবে শিখার ক্ষেত্রে অনেক বই পড়া, অনেক ভিডিও ও লাইভ ট্রেনিং কোর্স থেকে ধীরে ধীরে আপনি নিজের ধারণা পরিষ্কার করে সামনে আগাবেন এটাই স্বাভাবিক। ১টি – ২টি বই পড়ে বা ভিডিও সিরিজ দেখে আপনি ধারণা পরিষ্কার করতে পারবেন না। এটা অনেক সময় সাপেক্ষ ও ধৈর্যের বিষয়।

শিক্ষকের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে শিখাও আবার অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এটা তাদের জন্য সহজ যারা স্কুল, কলেজে এইভাবে নিজে নিজে শিখে অভ্যস্ত। অন্যরা এটা করতে গেলে অনেক বেশি সময় লাগিয়ে ফেলেন, কারণ তাদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই।

নিজে নিজে শিখতে পারা সব সময়ই ভালো অভ্যাস, এটা করতে পারলে অবশ্যই ভালো। তবে আমি মনে করি, সব ক্ষেত্রে এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যেমন কিছু জিনিস অভিজ্ঞতার বিষয়। আপনি নিজে নিজে অনেক ভুল করে অনেক সময় নষ্ট করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, কিন্তু সেটা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে নিতে পারা বুদ্ধিমানের কাজ। চাকা যেমন নতুন করে আবিষ্কার করার প্রয়োজন নেই, তেমন একই ভুল নিজের জীবনে করে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার কোন মানে হয় না। তাই বিদেশে অভিজ্ঞতা মানুষ অনেক টাকা দিয়ে কিনতে আগ্রহী হয়।

শিখার এই প্রসেস সম্পর্কে এবং এর কঠিন পথ সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা না থাকে তার মানে আপনার আসলে অভিজ্ঞ লোকের সাহায্য দরকার। আর যদি দেখেন যে আপনি নিজে নিজে শিখে বেশ ভালো আগাচ্ছেন, তাহলে একা চলা আপনার পক্ষে সম্ভব তবে যেখানে সর্টকাটে অন্যের থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নেয়া যায় সেখানে সেটা করে দ্রুত সামনে আগাতে হবে।

মনে রাখবেন, এখনকার দুনিয়াতে কেবল একটি কাজ কমপ্লিট করাই মুখ্য বিষয় নয়, এটা আপনি কতো কম সময়ে করতে পারলেন সেটাও মুখ্য বিষয়। আপনি যদি কোন কিছু অর্জন করতে ২ বছর পিছিয়ে যান, তাহলে সেটা পুষিয়ে উঠা পুরো জীবনেও সম্ভব না হতে পারে। কারণ পৃথিবী আপনার থেকেও দ্রুত এগিয়ে যায়, কাজেই আপনি যখন লক্ষে পৌঁছবেন ততক্ষণে হয়ত লক্ষ্যই পরিবর্তন হয়ে গেছে।

আশা করছি এই পোস্ট থেকে বুঝতে পারবেন যে একা বই পড়ে শিখার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ ও লম্বা পথের পথিক হওয়াই স্বাভাবিক। এখানে তাই কাজ হচ্ছে না কেন এটা ভেবে অস্থির হবার দরকার নেই।

মোঃ জালাল উদ্দিন,

প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ডেভস্কীল.কম

Share with Your Friends