Go Back to All Articles যেভাবে একজন প্রোগ্রামারের জীবন ধ্বংস হয় (কেস স্টাডি ৪ – শেষ পর্ব)

রাফির ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ। ঘড়ির দিকে চোখ পরল, সকাল ৮টা বাজে। লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়ে মনে পরলো, আজ আর ভার্সিটি যেতে হবে না তার। ঘুম ঘুম ভাবের ভিতরেও একটা অজানা শুন্যতা অনুভব হল তার। এতদিনের দৈনন্দিন অভ্যাস আজ হঠাৎ করে বদলে গেলো। চিরচেনা ভার্সিটির চত্বর এখন আর তার জন্য অপেক্ষা করছে না। দেখতে দেখতে কিভাবে ৪টা বছর পার হয়ে গেলো ভাবতেই অবাক লাগে তার, এখনও মনে হয় এইতো সেই দিন যেন প্রথম ক্লাসটা করেছিল সে।

মুখ হাত ধুয়ে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলো সে, আজ আর কিছু পড়তে হবে না তার। কোন তাড়া নেই তারপরও “এখন কি করবে” এই চিন্তাটা কেন যেন মাথার মধ্যে গেরে বসলো। আগে ভেবেছিলো লেখাপড়ার পাট চুকলে বেশ কিছুদিন আড্ডা মেরে, আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মনের যত অপূর্ণ ইচ্ছা আছে সব পূর্ণ করে নিবে। কিন্তু এখন কেন যেন সেটা তার কাছে আর আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে না। হঠাৎ করে যেন বয়স বেড়ে গেছে তার।

দেখতে দেখতে আরও ২টা মাস পার হয়ে গেলো। থিসিস, কনভোকেশন সব শেষ। এখন আসলেই তার কিছু করার নেই। চাকরির জন্য বাসা থেকে ইতিমধ্যেই বাবা মা চাপ দিচ্ছেন। কেন জানি তাঁদের ধারনা, সে বাদে তার অন্য সব বন্ধু ইতিমধ্যে চাকরি পেয়ে গেছে। অথচ সে দেখছে, তার ৩ বন্ধু কেবল চাকরি পেয়েছে, কিন্তু ৭ জন এখনও বাকি। তবে বাবা-মার সাথে কখনো এ নিয়ে বিতর্কে যায় না রাফি। একটা চাকরি দরকার, এটাই হল আসল কথা।

বন্ধু রবিনকে ফোন দিল রাফি। কি করা যায় প্ল্যান করার জন্য। বেশ কিছুদিন ধরেই জব সাইটে ঘুরাঘুরি করছে রাফি। কিন্তু ফ্রেশারের জন্য যুতসই কিছু এখনও পাচ্ছে না। সব জায়গায় ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা আর বিশাল রিকুয়ারমেন্টের লিস্ট। রবিন তাকে বুদ্ধি দিল এসবের তোয়াক্কা না করে সব জায়গায় অ্যাপ্লাই করতে। বুদ্ধিটা মনে ধরল রাফির। কিন্তু সিভি তো লিখতে হবে। কিভাবে সিভি লিখতে হয়, তাই জানা নেই তার। এখানেও রবিন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। ঝটপট একটা সিভির ফরম্যাট ইমেইল করে দিল সে।

রবিনের ইমেইল করা সিভির মধ্যে নামধাম পরিবর্তন করে চোখ বন্ধ করে সব জবে অ্যাপ্লাই করতে লাগলো রাফি। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারলো না, তার আরও ২৩ জন ক্লাসমেট একই কাজ করছে। এমনকি ঐ সিভির ফরম্যাটে যে একটা বানান ভুল ছিল সেটাও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে প্রত্যেকের সিভিতে। আর রবিনও এই ফরম্যাটটা পেয়েছে তার বন্ধুর কাছ থেকে, আর সে তার এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে। প্রথম কে এই সিভিটা লিখেছিল এবং কবে, এটা একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। এই সিভিগুলো দেখার পর কোন কোম্পানির টিম লিডের মনের অবস্থা কি হতে পারে, তা বুঝার কোন উপায়ই রাফির ছিল না।

তবে একটা চালাকি রাফি করেছে, যেহেতু দেখেছে জব পোস্টে অনেক কিছু চায়, তাই সে সবগুলো পোস্ট থেকে যা যা পেয়েছে সব নিজের স্কিল লিস্টে দিয়ে দিতে ভুল করেনি। এখন আর কেউ তাকে ইন্টারভিউতে না ডেকে পারবে না, মনে মনে ভাবল সে। কিন্তু এ যে এক মহা ভুল, তা রাফিকে বলে দেবার কেউ ছিল না। সব জায়গায় অ্যাপ্লাই করে ইন্টারভিউ কলের অপেক্ষায় থাকল সে।

দেখতে দেখতে আরও ৪টা মাস পার হয়ে গেছে। রাফি বেশ হতাশ। চাকরি তো দূরে থাক, ইন্টার্ভিউতেই কল পাচ্ছে না রাফি। ফোন করে রবিনের খোঁজ নিল, তারও একই অবস্থা। ভার্সিটিতে প্রোগ্রামিং নিয়ে তেমন একটা ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়নি তাদের। সিনিয়র কোন ভাইের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ নেই। তারপরও খুজে পেতে একজন কে বের করল তারা। সিনিয়র ভাইয়ের সুপারিশে শেষ পর্যন্ত একটা কোম্পানি থেকে ইন্টার্ভিউের জন্য ডাক পেলো তারা।

যথাসময়ে ইন্টার্ভিউ দিতে হাজির হল রাফি। কিন্তু রবিনের খোঁজ নেই, ছেলেটার সময় জ্ঞান আর হল না, মনে মনে ভাবল রাফি। রাফির আগেই রবিনের নাম ডাকা হল, কিন্তু রবিন তখন ট্রাফিক জ্যামে আটকা, তাই রাফিই ঢুকল ইন্টার্ভিউ দিতে।

এর আগে কখনো ইন্টার্ভিউ দেয়নি রাফি, তাই একটু ভয় ভয় করছিল তার। ইন্টার্ভিউতে সবাই খুব বন্ধু সুলভ আচরণ করল। এটা আশা করেনি রাফি। বেশ রিলাক্স ভাবেই ইন্টারভিউ দিল সে। বেশিরভাগ প্রশ্নই মাথার উপর দিয়ে গেল রাফির, তবে চেষ্টার কমতি করলো না সে। রাফি অবাক হল, ইন্টার্ভিউতে কেউ তার সার্টিফিকেট দেখতে চাইল না, তার ভার্সিটির প্রোজেক্টগুলোও নিয়ে গিয়েছিলো, তাও দেখলেন না তারা। শুধু প্রোগ্রামিং নিয়েই প্রশ্ন করে গেলেন। রাফি বুঝতে পারলো, ভার্সিটিতে প্রোগ্রামিং নিয়ে সিরিয়াস না হওয়াটা আজকে তার জন্য কাল হয়ে যেতে পারে।

ইন্টার্ভিউের পর অনেক আশায় ছিল রাফি যে চাকরিটা হয়ত হয়ে যাবে। কিন্তু সেখান থেকে আর কোন কল পেলো না সে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাফি, সবাই আশা করে আছে চাকরি কবে হবে। মানসিক চাপ খুবই অসহ্য লাগতে লাগলো তার। হঠাৎ একদিন জানতে পারলো রবিনের চাকরি হয়ে গেছে। তবে কোন সফটওয়্যার কোম্পানিতে নয়, একটা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে। রবিন তাকে বুদ্ধি দিল এখানেই ঢুকতে, সে সাহায্য করতে পারবে। একটা চাকরি এই মুহূর্তে রাফির খুবই দরকার। ব্যাংকের বেতনও শুরু ৩০,০০০ থেকে। তাই বুদ্ধিটা মনে ধরল রাফির। রবিনের কিছু সাহায্যে, খুব সহজেই ইন্টারভিউ উৎরে গেল সে।

চাকরির এক বছরের মাথায় বিয়ে করল রাফি। তারপর পার হয়ে গেছে আরও ৩টি বছর। এখন সে ব্যাংকের সিনিয়র কাস্টমার কেয়ার অফিসার। বেতন ৪০,০০০। কিন্তু তার বন্ধুদের অনেকের বেতন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বেতন যেমন হোক, রাফির স্বপ্ন ছিল প্রোগ্রামার হবার, কিন্তু রাফিও এখন বোঝে এটা এখন খুবই কঠিন কাজ। এমবিএ করে এই পেশাটাকেই আপন করে নেবার সিদ্ধান্ত নিল সে।

যদিও রাফির জীবন চিত্রটি অনেক শিক্ষার্থীর সাথে মিলে যায়, তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা ভুলগুলো জানলাম, আর এর সমাধানগুলোও আলোচনা করবো। যারা সতর্ক হয়ে ভুলগুলো এড়িয়ে চলবে, তারা আশা করছি নিজেদের একদিন ভাল প্রোগ্রামার হিসাবে গড়ে তুলতে সফল হবে। তবে একটি কথা বলে নেয়া দরকার, প্রোগ্রামিং ভাল না লাগলেও যে প্রোগ্রামার হতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যারা অন্য পেশায় যেতে ইচ্ছুক বা যাদের প্রোগ্রামিং ভালো লাগে না, তাদেরকে আমরা বরং নিজেদের পছন্দের বিষয়টি বেছে নিয়ে সেখানে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকি।

যাই হোক এখন আমরা রাফির ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা করবো-

রাফি প্রথম যে ভুলটি করেছে তাহল, সে আগে বুঝতে পারেনি যে প্রোগ্রামার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে তাকে নিয়মিত প্রোগ্রামিং এর সাথে যুক্ত থাকতে হবে। এটা আসলে আমরা ভার্সিটি লাইফে বহুবার শুনে থাকি। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে এটা হয়ে উঠে না। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, যখন আপনি সিভি লিখতে বসবেন, তখন আপনার রাতারাতি প্রোগ্রামিং শিখা সম্ভব হবে না। কাজেই পাশ করার আগে আপনি ভাল প্রোগ্রামিং পারেন এটা নিশ্চিত করতেই হবে। এজন্য ভালো প্রোগ্রামারদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। তারা যেভাবে নিয়মিত প্রোগ্রামিং করে সেভাবে আপনাকেও অনুসরণ করতে হবে। অনেক সময় যারা ভাল প্রোগ্রামিং করতে পারে না, তারা নিজেদের ভুলগুলো না শুধরে এবং ভালো প্রোগ্রামারদের অনুসরণ না করে বরং তাদের সাথে ঠাট্টা তামাসা করে বিষয়টা এড়িয়ে যায়। এর ফলে ভাল প্রোগ্রামাররাও তাদের সাথে মেশে না।

ভার্সিটি লাইফে ভালো সিনিয়র প্রোগ্রামারদের সাথে লিংক রাখা এবং তাদের উপদেশ মেনে চলা খুব কাজে লাগতে পারে। পাশ করার পর যদি কোন ভাল সিনিয়রের সাথে ভালো পরিচয় থাকে এবং তিনি আপনার প্রোগ্রামিং এর উপর আস্থা রাখেন, তাহলে অনেক কোম্পানি থেকে কল পাওয়া সহজ হয়। কাজেই তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করবেন।

সিভি একটা মান্ধাতা আমলের বাতিল জিনিষ। এটা না প্রোগ্রামারের কোন কাজে লাগে, না সফটওয়্যার কোম্পানির কোন কাজে লাগে। ডেভস্কিল চেষ্টা করছে এই বাতিল জিনিষটার উপদ্রপ থেকে আমাদের প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে উদ্ধার করার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যেহেতু এটাই একমাত্র পন্থা তাই সিভি লেখার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। যদি আপনি ইন্টারভিউতেই কল না পান, তাহলে তো আর নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারছেন না। অবশ্যই কারো সিভি কপি করবেন না। নিজে লিখবেন, বানান ও গ্রামারের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কখনই সিভিতে নিজেকে সবজান্তা হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না। বরং কোন একটি প্রোগ্রামিং প্ল্যাটফর্মের উপর ফোকাস করতে চেষ্টা করবেন। যেমন যদি জাভা প্রোগ্রামার হন, তাহলে জাভাকেই প্রাধান্য দিবেন। নেটওয়ার্কিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি এর সাথে যেন না আসে। নিজেকে যখন প্রোগ্রামার হিসাবে তুলে ধরবেন তখন অন্য অপ্রয়োজনীয় দক্ষতা উল্লেখ করার দরকার নেই। যেমন আপনি মাইক্রোসফট অফিসে খুব দক্ষ, কিংবা উইন্ডোজ চালাতে জানেন এমন ফালতু জিনিষ দিয়ে সিভির গুরুত্ব নষ্ট করবেন না।

সিভি লেখার ক্ষেত্রে খুব ছোট ফন্ট বা খুব বড় ফন্ট ব্যাবহার করবেন না। পড়তে সহজ হয় এমন ফন্ট ব্যাবহার করুন। অযথা সিভির পৃষ্ঠা সংখ্যা বারাবেন না। যত কম সময়ে সিভি থেকে আপনার দক্ষতা যাচাই করা যায়, ততই ভালো। যিনি সিভি পড়ছেন তার হাতে আরও ২০০-৩০০ সিভি আছে, একথা মাথায় রাখবেন।

গৎবাঁধা সিভি কারোই পড়তে ভালো লাগে না। সিভি তৈরিতে অভিনব সৃজনশীলতা ব্যাবহার করতে পারলে ভালো, তবে মাত্রাতিরিক্ত কিছু যেন না হয়। নিজের দক্ষতা এবং সিভির মূল বিষয় যেন হারিয়ে না যায়।

ভার্সিটির সিজিপিএ ও প্রোজেক্ট কেন ইন্টারভিউতে গুরুত্ব পায় না এ জিনিষটা বুঝা দরকার। একমাত্র কারণ, এগুলো থেকে কেউ নিশ্চিত করতে পারবে না আপনার প্রোগ্রামিং দক্ষতা কতখানি। যেমন আমরা সবাই জানি, আপনি অল্প কিছু কোড করেও ভালো সিজিপিএ পেতে পারেন, আবার খারাপ সিজিপিএ থাকলেই যে আপনি প্রোগ্রামিংএ ভালো তা বলা যায় না। আসলে এই দুটোর মধ্যে কোন প্রমাণযোগ্য সম্পর্ক নেই। প্রোজেক্ট গুলো যে আপনি নিজে একা করেছেন, বা আদৌ করেছেন তাও প্রমাণ করার উপায় নেই। ভার্সিটিতে অনেকেই নিজে প্রোজেক্ট না করে বন্ধুকে দিয়ে করিয়ে নেয়। ভার্সিটির কোর্স কোন গুরুত্ব পায় না, কারণ আপনি যে কোর্স করেছেন, তা আপনার বন্ধুরাও করেছে, কাজেই এগুলো দিয়ে আপনাকে আলাদা করা যায় না।

বরং যে জিনিষগুলো প্রমাণ করতে পারে যে আপনি আসলেই এমন কিছু করেছেন যা আপনার প্রোগ্রামিং দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আপনার সিভি আলাদা গুরুত্ব পাবে। যেমন আপনি যখন লেখেন যে আপনি ন্যাশনাল প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন এবং মোটামুটি একটা রেঙ্ক পেয়েছেন, তখন এর দ্বারা নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয় যে প্রোগ্রামিংএ আপনার কিছু দক্ষতা আছে। ডেভস্কিল (www.devskill.com) এমন একটা প্রোফাইল তৈরি করছে যেখানে ভালো প্রোগ্রামারদের দক্ষতা প্রমাণের কিছু মানদণ্ড আমরা দিচ্ছি। যেমন Stackoverflow, github, UVA ইত্যাদি ওয়েবসাইটে যদি আপনার স্কোর থাকে তাহলে এগুলো নিঃসন্দেহে আপনার প্রোগ্রামিং দক্ষতা প্রমাণ করে। যদিও যাদের এগুলোতে স্কোর নেই, তারা সবাই যে অদক্ষ তা নয়। তবে যাদের ভাল স্কোর আছে, তারা নিঃসন্দেহে ভাল। যারা ভাল কিন্তু স্কোর নেই, তাদের স্কোর না থাকার কারণ, তারা এই ব্যাপারে উদাসীন। তারা নিজেদের কাজ দিয়ে এমন জায়গায় পৌঁছে গেছেন যেখানে অন্য অনেক কিছু হয়তো তাদের দক্ষতা প্রমাণ করে। কিন্তু তারপরও এই বিষয়ে উদাসীন না থেকে নিজেদের প্রমাণ করা যায় এমন মানদণ্ড অনুসরণ করলে তা কোন একদিন কাজে লাগতে পারে। যেমন দেশের বাইরে চাকরির ক্ষেত্রে হয়তো এটা একদিন আপনাকে সাহায্য করতে পারে। যদিও মনে হতে পারে আমরা নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছি, কিন্তু আসলে আমরা ডেভস্কিল প্রোফাইল তৈরি করেছি যাতে এর দ্বারা প্রোগ্রামাররা নিজেদের প্রমাণ করার একটা দিকনির্দেশনা পায়। আপনি যদি সিভিতে আপনার ডেভস্কিল প্রোফাইল লিংক লিখেন, যিনি সিভি পরবেন, তিনি কৌতূহলী হবেন কারণ এটা একটা আনকমন জিনিষ। তারপর তিনি লিংকে যাবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত এবং সেখানে তিনি আপনার Stackoverflow, github, UVA স্কোর একত্রে দেখতে পারছেন। তার মানে মাত্র এক মিনিটে আপনি তাকে আপনার দক্ষতার একটা নমুনা দিয়ে দিতে পারলেন।

রাফির আরেকটি ভুল ছিল, সে হতাশ হয়ে এবং ব্যাংকের প্রাথমিক মোটা বেতনের লোভে নিজের লক্ষ্য ভুলে গিয়ে এমন একটি জবে ঢুকে গেছে যেখান থেকে তার ফেরা অনেক কঠিন। ক্যারিয়ারে সব সময় সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করতে হবে। কিছুদিন বকাঝকা শুনতে হলেও ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। রাফির চাকরি পেতে কিন্তু ৬ মাসের উপর সময় লেগে গেছে। এই সময়টাও যদি সে কঠোর পরিশ্রম করত ও প্রোগ্রামিংএ সময় দিত, তাহলে সে অনেকটাই নিজেকে ঝালাই করে নিতে পারতো। কিন্তু তা না করে, সে এলোমেলো ভাবেই অ্যাপ্লাই করে একটা চাকরি পেতে চেষ্টা করেছে। একজন ফ্রেশারের কাছে কেউ আহামরি প্রোগ্রামিং দক্ষতা আশা করে না। বেসিক মোটামুটি ভালো থাকলেই ইন্টারভিউ উৎরে যাওয়া সম্ভব। আর এটা করতে জিনিয়াস ও হতে হয়না, অনেক সময়ও লাগে না, তবে একটা ৬ মাসের প্ল্যান নিয়ে লেগে থেকে কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না। আমি কি শিখবো, সেটা কিভাবে দ্রুত শিখা যায় এগুলো ভাবতে হবে, এবং ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে আগাতে হবে।

প্রোগ্রামিং একটি মজার পেশা। এখানে যেমন অনেক মজা আছে, তেমন আছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। অন্য কোন পেশায় এত দ্রুত সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। শুধুমাত্র কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, কিছু জিনিষ না জানার জন্য অনেকেই এই পথ থেকে পিছলে পরে অথবা যথাযত সফলতা পায় না। তাই আমরা চেষ্টা করলাম বিষয়গুলো পরিস্কার করতে ও সচেতনতা তৈরি করতে। মনে রাখবেন, সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা, সমস্যাকে ভয় পাওয়া, হতাশ হওয়া ইত্যাদি হল পরাজিত মানুষের লক্ষন। জয়ী মানুষ সমস্যাকে সমাধান করে সামনে এগিয়ে যায়।

সকলের জন্য একটি সফল ভবিষ্যতের শুভকামনা রইলো।

মোঃ জালাল উদ্দিন,

প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ডেভস্কিল.কম

Share with Your Friends